১৮৭২ সালের চুক্তি আইন অনুযায়ী চুক্তি বলতে একজন সুস্থ মস্তিস্ক প্রাপ্ত বয়স্ক আইনের দৃষ্টিতে সাবালক ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন বস্তু অর্থের বিনিময়ে অথবা বস্তুর বিনিময়ে আদান প্রদান করার জন্য লিখিত ভাবে অংগীকারাবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে চুক্তি বলে । তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত প্রযোজ্য হবে শর্তগুলি নিম্নে দেওয়া হলো। চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই আইনের দৃষ্টিতে সাবালক, সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। অপর ব্যক্তি উক্ত প্রস্তাব গ্রহণে সম্মতি জ্ঞাপন করে কোন কিছু প্রতিদান করতে হবে। প্রতিদান ব্যতিত কোনো চুক্তিই কার্যকর হবে না
বায়না চুক্তি
জমি ক্রয়-বিক্রয়ের বায়না দলিলসহ যে কোন উদ্দেশ্যে কোনো চুক্তি সম্পদিত হলে তার আইনগত মূল্য অনেক ৷ চুক্তি লিখিত হোক আর অলিখিতই হোক ৷ তবে চুক্তি লিখিত হওয়াই উত্তম ৷ চুক্তি পত্রে উল্লেখিত চুক্তির শর্তসমূহ চুক্তি সম্পাদনকারী সকল পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক৷ চুক্তিপত্রে চুক্তির শর্ত সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে ৷ যেমন বায়না চুক্তির ক্ষেত্রে বায়নায় প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, জমির পরিমাণ, চুক্তিতে সাব্যস্ত মোট মূল্য, চুক্তিতে নির্ধারিত সময়সীমা, ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে ৷
চুক্তি প্রবলের মামলা
চুক্তি সম্পাদনের পর কোনো পক্ষ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে বা চুক্তি অস্বীকার করলে অপর পক্ষ ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর ১২ ধারা মতে আদালতে চুক্তি প্রবলের মামলা করতে পারবেন ৷ এরূপ মামলা চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে বা চুক্তি অস্বীকারের তারিখ হতে ৩ বছরের মধ্যে করা যায় (১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৯১ অনুচেছদ)।
আদালতের মাধ্যমে দলিল রেজিষ্ট্রি
কেউ জমি বিক্রয়ের বায়না চুক্তি করে পরবর্তীতে কাওলা/কবলা দলিল সম্পাদন করতে গড়িমসি করলে এবং ক্রেতা চুক্তি প্রবলের মামলা করলে আদালত বিক্রেতাকে দলিল সম্পাদনের জন্য নির্দেশ এমনকি আদালত স্বয়ং বা প্রতিনিধির মাধ্যমে কাওলা/কবলা দলিল সম্পাদন করে তা রেজিষ্ট্রির জন্য সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে প্রেরণ করতে পারেন ৷ এরূপ দলিলই হলো আদালতের দলিল ৷
চুক্তি রদ
চুক্তি প্রবলের জন্য যেমন মামলা করা যায় তেমনি প্রয়োজনে চুক্তি রদের জন্যও আদালতের আশ্রয় পাওয়া যায় ৷ ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৫ ধারায় চুক্তি রদের বিধান রাখা হয়েছে ৷ চুক্তি রদ হওয়া প্রয়োজন এ বিষয়টি জানার বা বুঝতে পারার তারিখ হতে ৩ বছরের মধ্যে চুক্তি রদের মামলা করা যায় ৷ কেউ জমি ক্রয়ের বায়না চুক্তি করে পরবর্তীতে জমি কাওলা/কবলা দলিল করে নিতে গড়িমসি করলে জমির বিক্রেতা এরূপ বায়না চুক্তি রদের মামলা করে চুক্তি রদ ঘটাতে পারেন ৷
বায়নার টাকা বাজেয়াপ্ত
বায়নার টাকা ক্রয় মূল্যের অংশ ৷ ক্রেতার ব্যর্থতার কারণে চুক্তিতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ক্রেতা জমি কাওলা/কবলা করে নিতে না পারলে চুক্তি ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং বায়নার টাকা বিক্রেতার অনুকুলে বাজেয়াপ্ত হবে ।
(সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১৩(২) ধারা) ।
সময় বর্ধিত করণ
আন্তরিক প্রচেষ্টার পরও চুক্তির শর্ত যথাসময়ে পালনে সক্ষম না হলে বা আদালতের নির্ধারিত সময়সীমা বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে আদালতে আবেদন বা আপিলের মাধ্যমে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায়। (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৫ (৭) ধারা)। অধিকার কোনো চুক্তি সম্পাদনের পর তা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কার্যকর করার অধিকার । (১৮৭৭সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২ ধারা) চুক্তি সংশোধন করার অধিকার । (১৮৭৭সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২ ধারা) চুক্তি ভংগ হলে ক্ষতিপূরণ পাবার অধিকার । (১৮৭৭সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪১ ধারা) লংঘন চুক্তি সংশোধন করতে না দেওয়া । চুক্তি রদ করতে না দেওয়া । চুক্তি ভংগ হলে ক্ষতিপূরণ না পাওয়া । প্রতিকার চুক্তি কার্যকরী করণের জন্য চুক্তির বিষয় বস্তুর মূল্য অনুযায়ী এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানী আদালতে আরজির সাথে উপযুক্ত কোর্ট ফি সংযুক্ত করে চুক্তি প্রবলের/কর্যকরী করণের মামলা করা যাবে ।
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অথবা বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা দাবী করে এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানী আদালতে দরখাস্ত দাখিল করা যাবে । চুক্তি ভংগ হলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য উপযুক্ত দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে । চুক্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাজটি কার্যকরী করাতে না পারলেও যেন হুবহু ঐ চুক্তিটির মত নতুন করে অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে চুক্তি সম্পাদন করলেও পরবর্তী চুক্তিটির কাজ করা হতে বিরত রাখার জন্য দেওয়ানী আদালতে নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করে দরখাস্ত দায়ের করা যাবে ।